শ্বসন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন শক্তি দিয়ে জীবের সব ধরনের ক্রিয়া-বিক্রিয়া এবং কাজকর্ম পরিচালিত হয়। শ্বসনে নির্গত জীবের প্রধান খাদ্য শর্করা উৎপন্নের জন্য সালোকসংশ্লেষণে ব্যবহৃত হয়। এ প্রক্রিয়া উদ্ভিদে খনিজ লবণ পরিশোষণে সাহায্য করে, যা পরোক্ষভাবে উদ্ভিদের বৃদ্ধি এবং অন্যান্য জৈবিক প্রক্রিয়া চালু রাখে। কোষ বিভাজনের প্রয়োজনীয় শক্তি ও কিছু আনুষঙ্গিক পদার্থ শ্বসন প্রক্রিয়া থেকে আসে। তাই বলা যেতে পারে এ প্রক্রিয়া জীবের দৈহিক বৃদ্ধিও নিয়ন্ত্রণ করে। এ প্রক্রিয়া বিভিন্ন উপক্ষার ও জৈব এসিড সৃষ্টিতে সহায়তা করার মাধ্যমে জীবনের অন্যান্য জৈবিক কাজেও সহায়তা করে।
কিছু কিছু ব্যাকটেরিয়া অক্সিজেনের উপস্থিতিতে বাঁচতে পারে না। এদের শক্তি উৎপাদনের একমাত্র উপায় হলো অবাত শ্বসন। এ প্রক্রিয়ায় ইথাইল অ্যালকোহল তৈরি হয়, যা বিভিন্ন শিল্পে ব্যবহৃত হয়। ল্যাকটিক এসিড ফার্মেন্টেশনের মাধ্যমে এ প্রক্রিয়ায় দই, পনির ইত্যাদি উৎপাদিত হয়। রুটি তৈরিতে এ প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হয়। ইস্টের অবাত শ্বসনের ফলে অ্যালকোহল এবং CO, গ্যাস তৈরি হয়। এই CO₂ প্যাসের চাপে রুটি ফুলে গিয়ে ভিতরে ফাঁপা হয়।
কাজ: শ্বসন প্রক্রিয়ায় তাপ নির্গমনের পরীক্ষা।
উপকরণ: দুটি থার্মোফ্লাস্ক, দুটি থার্মোমিটার, ছিদ্রযুক্ত দুটি রাবার কর্ক, অঙ্কুরিত ছোলা এবং 10% মারকিউরিক ক্লোরাইড দ্রবণ।
পদ্ধতি: দুটি থার্মোফ্লাস্কের একটিতে 'ক' ও অন্যটিতে 'খ' লেবেল লাগাতে হবে। 'ক' চিহ্নিত থার্মোফ্লাক্ষে সামান্য পানিসহ কিছু অঙ্কুরিত ছোলাবীজ নিতে হবে। ছিদ্রযুক্ত রাবার কর্কের মধ্য দিয়ে একটি থার্মোমিটার প্রবেশ করানোর পর ফ্লাস্কের মুখটি ভালো করে বন্ধ করে দিতে হবে। অবশিষ্ট অঙ্কুরিত ছোলাগুলোকে 10% ফুটন্ত মারকিউরিক ক্লোরাইড দ্রবণে 10 মিনিট ডুবিয়ে রেখে 'খ' চিহ্নিত ফ্লাঙ্কে নিতে হবে এবং ছিদ্রযুক্ত কর্কের মধ্য দিয়ে একটি থার্মোমিটার ঢুকিয়ে ফ্লাস্কের মুখ ভালোভাবে আটকে দিতে হবে। এবার 'ক' ও 'খ' চিহ্নিত থার্মোমিটার দুটির প্রাথমিক তাপমাত্রা লিখে রেখে ফ্লাস্ক দুটিকে রেখে দিতে হবে।
পর্যবেক্ষণ: কয়েক ঘণ্টা পর দেখা যাবে 'ক' থার্মোমিটারের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে কিন্তু 'খ' থার্মোমিটারের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে।
সিদ্ধান্ত: 'ক' থার্মোফ্লাস্কের অঙ্কুরিত ছোলাপুলো সজীব থাকায় শ্বসন প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে এবং তাপ নির্গমনের কারণে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে 'খ' ফ্লাস্কের ছোলাগুলো মারকিউরিক ক্লোরাইড দ্রবণে ডুবিয়ে নেওয়াতে বীজগুলো মরে গিয়ে নির্বীজ (Sterilized) হয়ে যায়। ফলে শ্বসন প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ায় তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকে।
সতর্কতা:
1. লক্ষ রাখতে হবে যেন বীজগুলো সতেজ এবং অঙ্কুরিত হয়।
2. থার্মোমিটারের পারদপূর্ণ অংশটি যেন বীজের মাঝখানে থাকে।
আরও দেখুন...